ক্ষুদ্র ধর্মান্ধ শ্রেণির কাছে বিদ্যানন্দ’র হারা যাবে না
সকালবেলা ফেইসবুক খুলেই জানতে হলো বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পদ থেকে সরে যাবার। এই সংবাদ পড়ার পর কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।
করোনা যখন আসি আসি করছে তখন থেকে দেখেছি গনপরিবহনে জীবাণু মুক্ত করন, সমাজের সকল শ্রেণির জন্য আহার বিতরণ, চলতি পথে পথিকের ক্ষুধা নিবারন, শহরের রাস্তা জীবাণুনাশক ছিটানো কিম্বা রাস্তার অসহায় জীব কুকুর বিড়ালকে খাওয়ানো ইত্যাদিতে বিদ্যানন্দ কাজ করে মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছে।
এইরকম আরেকজনের নাম শুনেছি চন্দ্র নাথ। অত্যন্ত অত্যন্ত দরিদ্র ঘর থেকে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে জীবনে সফল হয়ে বাংলাদেশের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে। চন্দ্র নাথ ফান্ডরাইজার নামে পেজ খুলে বেশ অংকের ফান্ড তুলে করোনা যুদ্ধে অনুদান করেছেন।
শুনছি বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার দাশের ধর্ম পরিচয়ের দিকে আঙ্গুল তুলেছে এক পাল মৌলবাদী। শুনছি পেইজে গিয়ে অসভ্য বর্বররা নাকি ক্রমাগত গালি দিচ্ছে, হিন্দু প্রতিষ্ঠাতাকে অপমান করতে চাইছে। এবং এরফলে কিশোর কুমার দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পদ থেকে সরে যাবার, যাতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয়, কোন ধরণের প্রশ্নের মুখে না পড়ে। একই সাথে তিনি বিদ্যানন্দ নামটির ব্যাপারটি ক্ল্যারিফাই করেছেন এই মৌলবাদীদের উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ সমস্যা কেবল কিশোর কুমার দাশে না। সমস্যা স্বয়ং ‘বিদ্যানন্দ’ নামেও।
এতদিন কোন সমস্যা হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানে যারা অনুদান করেছেন তাদের অনেকেই মুসলমান আর বিদ্যানন্দে যারা কাজ করে তাদেরও ৯০% স্বেচ্ছাসেবক মুসলমান। স্বাভাবিক ৯০% মুসলমানের দেশে ৯০% স্বেচ্ছাসেবক হবে। এবং এই স্বেচ্ছাসেবকদের ওখানে কাজ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। তাহলে বুঝতে হবে বিদ্যানন্দ ও কিশোর কুমার দাসকে নিয়ে সমাজের খুব ক্ষুদ্র অংশের মানুষের সমস্যা। আপনার পদত্যাগ করার এই সিদ্ধান্ত ৯০% মানুষকে হারিয়ে দিবে। তাই আমার অনুরোধ আপনি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন। Please আমাদেরকে হারিয়ে দিবেন না।
করোনা পরিস্থিতিতে কারা সমাজের গরিব দুঃখিদের পাশে দাঁড়িয়েছে? একটু খোঁজ নিলেই জানবেন প্রগতিশীল ধারার রাজনীতি যারা করে তারা এবং প্রগতিশীলতাকে যারা ধারণ করে তারা।
যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে তাদের ব্যানারে কোন স্বেচ্ছাসেবকদের দেখতে পাচ্ছেন? যারা সরকারী দল করে তারাও তেমন জোরালোভাবে মাঠে নেই। বরং তারা চাল চুরি ও ত্রাণ চুরিতে ব্যস্ত। কিন্তু আমি বেশ কয়েকটি বাম অথবা বাম ধারার মানুষদের দেখেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
দানের কোন ধর্ম বা রাজনীতি থাকতে পারেনা। দানের সাথে পুণ্য কামানোর লোভও থাকতে পারেনা। তারপরও আমি লক্ষ করেছি মুসলমানরা দান বলতে মসজিদ, এতিমখানা ইত্যাদিতে দান বুঝে। এখন অনেক মুসলমান অনেক ধনী হয়েছে কিন্তু তারা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দেয় না। কেন জানি মুসলমানরা দানের সাথে প্রাপ্তিকে মিলিয়ে ফেলে। দানের সাথে পুণ্য এবং পুণ্যের সাথে বেহেস্ত মেলানোতে মসজিদ, এতিমখানাতে দানের বাহিরে আমরা ভাবতে পারিনা।
- অধ্যাপক- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সংবাদ২৪-এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়।