‘হে তাপস, তব শুষ্ক কঠোর রূপের গভীর রসে, মন আজি মোর উদাস বিভোর কোন্ সে ভাবের বশে।’ গ্রীষ্ম আসলে মনের মধ্যে রবীন্দ্র রচনার এই গানটি বেজে ওঠে। কারণ এই গ্রীষ্ম মানে অতিষ্ঠ দুপুর শুধু না, গ্রীষ্ম মানে বাঙলার শ্যামল প্রকৃতির আশ্চর্য রূপ-লাবণ্যের দর্শন।
আশপাশে চোখ ফেললেই দেখবেন অভয়ারণ্যের শরীর জুড়ে ফুটেছে কতফুল। আশ্চর্য এক নীরবতায় বাতাসে দোলে, হাসে খ্যালে। কি নাম ফুলগুলোর? জানতে ইচ্ছা হয়! গ্রীষ্মে পথ চলতে চলতে মনে হয় দর্শনেন্দ্রীয় শীতল করে তোলা নান্দনিকতার সব ছবি তোলা যায়না। সব নাম জানতে হয়না। কেবল হৃদয়ের মুকুরে খোদাই করে রাখতে হয়। প্রকৃতির সবচেয়ে নির্মল রূপটি আপনি দেখছেন, আর কী চাই?

গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামবাংলায় এই ফুলটি বেশি দেখা যায়। গাছভরা অফুরন্ত প্রস্ফুটন প্রকৃতিকে এক অনাবিল উচ্ছ্বাস দেয়। বাংলাদেশের জলাভূমি, নিচু এলাকা, নদীর তীর ও হাওর এলাকায় সহজদৃষ্ট বরুণ। বসন্তে পাতা ঝরে গেলে গ্রীষ্মের শুরুতে নতুন পাতার সঙ্গে বড় বড় থোকায় ফুলের আগমন হয়। সাদা ও হালকা হলুদ বর্ণের ফুলের পসরা মাসখানেক ধরে থাকে।

সোনাঝরা এই ফুলের নাম সোনালু। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ-সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। আবার ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ।

অযত্নে অবহেলায় গজানো ঝোপজঙ্গলের গাছগাছালির মধ্যে একটি জারুল। গ্রীষ্মে পাপড়ির নমনীয় কোমলতায়, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে জারুল ফুল।

কখনও গোলাপী বা লাল রঙের ফুলের কেন্দ্রে হলুদের ফোটা দেওয়া মোহময় ফুল কাঠগোলাপ। বাহারী এই ফুলের দেখা আমাদের দেশে প্রায়শই মেলে। কাঠগোলাপের অনেগুলো ধরণও আছে।

এইরকম ঘাসফুলের অফুরন্ত প্রস্ফুটন প্রকৃতিকে এক অনাবিল উচ্ছ্বাস দেয়। বাংলাদেশের জলাভূমি, নিচু এলাকা, নদীর তীর ও হাওর এলাকায় সহজদৃষ্ট এই ফুল।
গ্রীষ্মের ফুলে আমরা এতোটাই মুগ্ধ হই যে কোন ফুলটি বেশি আকর্ষণ করে তা বুঝে উঠতে পারি না। মনে হয় সব সুন্দর। এই আচ্চা এই সুন্দরের আর কোনো তুলনা হয়?

যত্ন নিয়ে সারি করে ফুল লাগিয়ে বাগান করা খুব কঠিন কাজ। আর করেও বন ঝোপের সারাসারি ফুলের নাচন দেখা যায়? শহরে ফুলে টব নিয়ে আসা মনেই গায়ের ঘাম ফেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখা। অথচ প্রকৃতিতে কত হাজার হাজার ফুল ঠিকে থাকে পরিচর্যা ছাড়াই।

প্রকৃতির মাঝে স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়ে বেড়ে ওঠা এ ফুলের আঞ্চলিক নাম ‘লুটকি’। সিলেট অঞ্চলে একে লুকটি ছাড়াও ফুটকি নামে স্থানীয় কেউ কেউ নামকরণ করে রেখেছেন। রাস্তার দ্বারে কিংবা মাঠের কোনাসহ সবখানে এই ফুলের দেখা মিলে।
ফুলে যে বৈচিত্র , যে প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা; বাগানে জ্যামিতিক প্যাটার্ন করে রংয়ের পালাবদল করে লাগানো ফুলে তার ছিটোফোঁটা মাত্র পায়। তবে এই ফুলটি এখনও বনের মধ্যেই আছে।
গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামবাংলায় এই ফুলটি বেশি চোখে পড়ে। তরুনীরা বাড়ির আঙ্গিনায় এটিকে যত্ন করে রোপনও করেন।