সাহায্য নয় সমাধান চাই
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে আমি একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আছি। তো বছর দুই হবে। একদিন জানলাম যে পাশের গ্রামের একজন কিশোর ক্যান্সার আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। সাহায্য করার খবর আসলো। শিক্ষার্থী এবং আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করলাম। কয়েক দিন পর শুনলাম সে মারা গেছে। এর পূর্বাপর অনেকেই সাহায্যের জন্যে এসেছেন। আমরাও সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটা কি কোনো সমাধান? রাষ্ট্রের মর্যাদা কি তাতে বাড়ে?
এ প্রসঙ্গ তুললাম মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আইডিয়াল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ফারদিন আল মাহিনের জন্যে। সে ‘নন হজকিন লিম্ফোমা’ নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাকে প্রায় দুই বছর টানা চিকিৎসা নিতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাস হাসপাতালে থেকেই নিয়মিত কেমো নিতে হবে।
মাহিন বর্তমানে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অব রিসার্স অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তার চিকিৎসায় ব্যয় হবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু তার গরীব বাবার পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অসম্ভব। ইতোমধ্যে তিনি আত্মীয়-স্বজন ও তার বন্ধুবান্ধব মিলে কিছু অর্থের ব্যবস্থা করেছেন, যা দিয়ে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু ছেলেকে পুরো সুস্থ করে তুলতে আরও বহুদূর যেতে হবে তাকে। তাই তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, তার সন্তানকে বাঁচাতে তারা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক নিজামুল হক বিপুল তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রাজনগর উপজেলা সদরের পদিনাপুর গ্রামে যেখানটায় আমার পারিবারিক ঠিকানা তার পাশেই ফারদিন-এর বাড়ি। মাঝখানে শুধু পিচঢালা একটি সড়ক। মায়া ভরা মুখের ছোট্ট ফারদিন এখন ঢাকার মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালের বেডে শুয়ে যুদ্ধ করছে তার শরীরে বাসা বাঁধা দুরারোগ্য ক্যান্সারকে পরাস্ত করতে। ফারদিন এই যুদ্ধে জিতবেই, তাকে জিততেই হবে। তার যে আরও অনেক কাজ বাকি। নতুন প্রজন্মের এই শিশুর দেশকে দেয়ার আছে অনেক কিছু। কিন্তু ফারদিনের একার পক্ষে এই যুদ্ধে জেতা বেশ কঠিন। প্রয়োজন আপনার- আমার- আমাদের সম্মিলিত সহযোগিতা। ফারদিনের চিকিৎসা বেশ ব্যয় বহুল। প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু তার দরিদ্র পিতার পক্ষে সেই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তশালী হৃদয়বান ব্যাক্তিরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে এই যুদ্ধে জেতা ফারদিনের জন্য কঠিন হবে না। ফেসবুকে থাকা আমার বন্ধু বান্ধবরা যদি একটু একটু করে আপনাদের সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দেন, ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়ান আমার বিশ্বাস ফারদিনের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
প্লিজ, আসুন আমরা ছোট্ট ফারদিনের পাশে দাঁড়াই।’
এরকম অসংখ্য ফারদিনের খবর প্রায়ই চোখে পরে। অসংখ্য বাবা মার আর্তনাদ ফুটে ওঠে বিভিন্ন মাধ্যমে। কবে চিকিৎসার অর্থ সাহায্যের জন্যে কোন বাবা-মাকে বা কাউকেই হাত বাড়াতে হবে না? রাষ্ট্র কী এখানে কেবল দর্শক হয়ে থাকবে? রাষ্ট্রের করণীয় কিছু নেই?
অবশ্যই আছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থায়’ বলা আছে, রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাতে অন্যান্য বিষয়সহ অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দরোজায় দাঁড়িয়েও এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। যতই উন্নয়নের রোল মডেল বলে ঢেঁকুর তোলা হোক না কেনো- সত্য হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা দুনিয়ার সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশের কাতারেই আছি। আসুন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে মানুষের অসহায়ত্ব দূর করে ফারদিনদের স্বপ্ন পূরণের কাজ করে সত্যিকারের রোল মডেল হোন।
লেখক: জাহাঙ্গীর জয়েস, কবি।